"ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট"



(১৮+ উত্তর! উপযুক্ত বয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য)

নিজের মধ্যে যৌনবাসনা দমিয়ে রাখা মোটেও সহজ কাজ নয়। তাই গুরুত্বের সাথেই উত্তর দেবার চেষ্টা করব।

উত্তরটা ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রথমে এই সম্পর্ক কিভাবে করবেন আর সাথে এর ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা করা যাক।

"ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট" (উত্তরের বাকি অংশে এর পরিবর্তে 'সম্পর্ক' শব্দটা ব্যবহার করব) কৌতুহলোদ্দীপক হলেও আসলে এই সম্পর্কটা বেশ জটিল। শুরুর দিকে সাধারণত দুজন ভাবে যে, আমাদের মধ্যে অনুভূতির কোন আদান-প্রদান থাকবে না, থাকবে শুধু যৌনতা। সাধারণত মানুষ যখন ভালবাসার সম্পর্কের দায় বহন করে ক্লান্ত হয়, কিংবা শুধুই যৌনতা চায় - সম্পর্কের দায় বহন করতে চায় না, তখনই এই সম্পর্কের প্রয়োজন হয়। প্রথম প্রথম সম্পর্কটা বেশ মজার, আনন্দদায়ক এবং মানসিক অবসাদ থেকে ক্ষণিকের মুক্তি দেয়। মনে হবে, এর চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারে না। তাই এ সম্পর্ক করতে চাইলে নির্বাচিত ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করুন এভাবে

- আপনি যৌনতা সম্পর্কে ভাল জানেন

- দুনিয়াতে অনুভূতির দাম নাই

- যৌনসুখই শ্রেষ্ঠ সুখ।

কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা শুধুই যৌনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বা রাখা যায় না। কিভাবে, সেটা বলছি।

১) একজন ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, মানুষ হিসেবে আমরা সবাই নিজেদের শরীরের গড়ন বা সৌন্দর্য নিয়ে অস্বস্তিতে থাকি, অনিশ্চিত থাকি। নিজের ভাবনায় আসে, "নগ্ন হলে না জানি কেমন দেখায় আমাকে!" "আমার শরীর সুন্দর তো?" তখন একে অন্যকে প্রশংসা করতে হয়, যেন সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। অন্যদিকে, আমরা মানসিক অনেক অনিশ্চয়তায় থাকি, দুশ্চিন্তায় থাকি। এগুলো কোনো-না-কোনোভাবে চলে আসে দুজনের একান্ত আলাপের সময়, হোক সেটা যৌন মিলনের পর বা রাতে ঘুমানোর আগে। তখন কোন সদুপদেশ না দিলে, কিংবা অন্ততঃ মন দিয়ে না শুনলে সঙ্গীকে অপমান করা হয়। আবার, দুজন মিলে কোনো না কোনো স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। নয়ত পরের বার একসাথে হবার করার ইচ্ছা কমে যায়। সবসময় বদ্ধ ঘরে যেতেও ইচ্ছে করবে না। একজন বলে বসবে, "চল আজ ঘুরে আসি।" "আজ বাইরে খাবো।" এভাবে একে অন্যকে মূল্যায়ন করতে থাকলে এবং দেখাশোনা করতে থাকলে এক সময় গিয়ে মনে হয়, ওই মানুষটাই আমাকে বোঝে, মূল্যায়ন করে। এসব কারণ মিলিয়ে যৌনতা ছাপিয়ে অনুভূতি জন্ম নেয় একে অন্যের প্রতি। ছেলে হোক, বা মেয়ে হোক, কেউই চায় না একজন যৌনদাস হতে।

২) আবার যৌনতা অনুভূতির আদান-প্রদান ছাড়া আনন্দদায়ক নয়। সঙ্গীকে আনন্দ দেবার কথা মাথায় রেখেই আপনাকে যৌন মিলন করতে হবে। নাইলে আর বন্ধুত্বই বা কেন? যৌন মিলনের সময় নিজের আনন্দ বুঝে নিয়ে অন্যের আনন্দকে মূল্যায়ন না করলে সেটা অপমানজনক। হয়ত মেয়ে সঙ্গীটা ঘাড়ে পিঠে চুমু খেতে পছন্দ করে, কিন্তু আপনি ছেলে সঙ্গী হয়ে তা পাত্তাই দিলেন না - তা চলবে না। আবার সঙ্গীর দেহের স্পর্শ, গন্ধ, ত্বকের ঘর্ষণ- এগুলো আসক্তি বাড়ায়। এর ফলেও একজন আরেকজনের প্রতি দূর্বলতা চলে আসে।

অনুভূতি জন্মানো এভাবে অনিবার্য হয়ে দাড়ায়। অনেকে মিথ্যা বলবে, "আরে, ওর প্রতি ত আমার কোন ফিলিংস-ই নাই।" বা, "নাহ, আমাদের মধ্যে কোন অনুভূতি কাজ করে না।" এগুলো সত্য না। মনে রাখবেন, নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর সঙ্গীকে বেশি আকর্ষণীয় দেখাতে সবাই মিথ্যা বলে, এটাই মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য।

পরবর্তী সম্ভাবনা হতে পারে এমনঃ

- এখন যদি উভয়েই দূর্বল হয়ে পড়েন, এবং স্থায়ী সম্পর্কে জড়াতে চান, তাহলে মানসিক ও শারিরীকদিক থেকে উভয়ের জন্য ভালো।

- যদি উভয়েই স্থায়ী সম্পর্কে না যেতে চান, সেক্ষেত্রে ভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আপনাদের মধ্যে একজন ভিন্ন আরেকজনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে চাইবেন, তখন সেটা মানিয়ে নেওয়া সমস্যা। নিজেদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি যাওয়াটা কষ্টের হতে পারে। কিন্তু সবসময় কে চায় শুধুই সেক্স? আদর ভালোবাসার দরকার আছে তো! তো, অন্য নতুন সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে একজন জড়াতে চাইতেই পারে। কিন্তু অন্যের সাথে নিজের সঙ্গীকে দেখলে হিংসা হয়, গা জ্বলে। দখলদারী মন বলে, "সে কেন তোমার না? কি কম আছে তোমার?" কিংবা, "সে আর তোমার না, চাইলেও পাবে না তাকে!" ফেসবুকের যুগে সেটা এড়াতেও পারবেন না। সিগারেট বা মদ এ কষ্ট দমাতে পারলেও ভোলাতে পারে না।

- এই সম্পর্কের মধ্যে যদি একজন সম্পর্ক চান, আরেকজন চান না, তাহলে বিপত্তি বাড়বে। খোটা শোনা লাগবে, "সেক্সের জন্য ত ঠিকই সব করতে পারো।" "সেক্স করতে পারো, বিয়ে করতে পারো না!" "সেক্স ছাড়া ত কিছুই চাই না তোমার।" এই অপমানের উত্তর নাই, শুধু অপমানিত হয়ে রাগে জ্বলবেন।

তাহলে, ঘটনাটা দাড়িয়ে গেল একজন সঙ্গীর সাথে বেশিদিন আপনি এই ধরণের সম্পর্ক সচল রাখতে পারবেন না। উপায়, একাধিক সঙ্গী রাখা। কিন্তু একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে আপনি আরেকটা বিপদে পড়বেন।

১) পাশাপাশি দুইটা এমন সম্পর্ক রাখলে দুজনের কাছে এ সম্পর্কের কথা স্বীকার করতে পারবেন না, কারণ একজন আরেকজনকে মেনে নেবে না। গোপন রেখে ধরা খেলে সেটা সবার জন্যই ক্ষতিকর। (কপালে পিটুনি থাকতে পারে)

২) একাধিক শারিরীক সম্পর্কে জড়ালে সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা হবে, তা হলো শারিরীক আনন্দ পাবেন, কিন্তু পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাবেন না৷ মনে হবে, ওর এটা ভালো, তার সেটা ভালো। একের পর এক তুলনায় হারিয়ে ফেলবেন কি চান আপনি বা কেমনটা চান আপনি। শুধু মগজেরই না, আমাদের শরীরেরও আলাদা 'স্মৃতি' বা তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। হিন্দু ধর্মের Yogic Culture এ এর নাম হচ্ছে " রুনানুবান্দা " —এটি বাংলা শব্দ নয় । একের পর এক যৌন সঙ্গ করলে স্বাভাবিকভাবেই সেই তথ্যের তুলনা অবচেতন মনেই চলতে থাকে। একাধিক সঙ্গী থাকা মানুষ অতৃপ্তিতে ভোগে এর জন্য। একের পর এক সঙ্গী বদলাতে থাকে।

অর্থাৎ এই সম্পর্ক যতটা না শুনতে আগ্রহোদ্দীপক লাগে, কিন্তু বাস্তবে অশান্তিদায়ক। যে যতই বলুক, "হেব্বি মজা! এই করছি সেই করছি"- বাজে কথা। বিশ্বাস করেন, আসলে যারা করছে, নিজের কুয়া নিজেই খুড়ছে। অথবা, অতিরঞ্জিত গল্প বলে আপনার চেয়ে নিজেকে সেরা বলে প্রচার করার ছলনা ছাড়া এগুলো আর কিছু না। আর আপনি ভেবে বসে আছেন, জীবনে কিছুই করতে পারলাম না।

তাই, হীনমন্যতায় ভুগবেন না, প্লিজ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।

তাহলে, একাকীত্বের জীবনে যৌন সুখ কিভাবে পাবেন?

যদি যৌনতাকে উপভোগ করতে চান, তাহলে নিজেকে দিয়েই করুন এভাবেঃ-

১) যৌন সচেতন হোনঃ যৌনতা সম্পর্কে জানতে বই পড়ুন, ইন্টারনেট থেকে প্রবন্ধ পড়ুন। সুস্থ যৌনাচার সম্পর্কে জানুন। শুধু কনডম ব্যবহার করতে জানাই সুস্থ যৌনতা নয়। নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, সঙ্গীকে সুস্থ আনন্দ দিতে জানা, সঙ্গীর মনে কামবোধ জাগানো, সুস্থ-ও-প্রাপ্ত বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচন ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন। হার্ড-কোর পর্ণ অবাস্তব, এটা মেনে নিন আর দেখা বাদ দিন।

২) নিজের দেহের সাথে পরিচিত হোনঃ আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের নগ্ন শরীরকে দেখুন খুটিয়ে খুটিয়ে। চলচ্চিত্র আর বিজ্ঞাপন আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে, দেহে ত্রুটি থাকাটাই বাস্তব। নিজের খুতগুলোকে মেনে নিন। সাথে এই সত্যও মেনে নিন, আপনার সঙ্গী দেহও এমন অসংখ্য খুতে ভরা থাকবে। দেহে ফাটা দাগ থাকবে, পেটে-কোমরে মেদ থাকবে, এখানে-ওখানে কালো দাগ থাকবে, ব্রণ থাকবে, অবাঞ্ছিত লোম থাকবে- আরো কত কি। (চাইলে, স্বমেহন বা হস্তমৈথুন করতে জানুন। নিজেকে আগে যৌনসুখ দিতে শিখুন। তাহলে সঙ্গীকে বলতে পারবেন, আপনি কি চান। তাকেও সুখী করতে চাইবেন এবং পারবেনও।)

৩) যৌনতাকে নিজের দাস বানানঃ যৌনতা ভাল দাস, কিন্তু খারাপ প্রভু (সম্ভবত সক্রেটিসের কথা)। যখন তখন যেন যৌন চাহিদা আপনাকে গ্রাস করে না বসে। এর জন্য নিজের যৌনতাকে সুস্থ ভাবে প্রকাশ করতে শিখুন। ছবি আকা, কবিতা লেখা, গল্প লেখা হতে পারে সুস্থ প্রকাশ। এগুলো বিশ্বস্ত কাউকে দেখান বা কাউকে দেখানোর জন্য লুকিয়ে রেখে দিন- যে আপনার এই অনুভূতিগুলোকে মূল্যায়ন করবে অথবা/এবং হাস্যরস করে আপনার সংকোচবোধ থাকলে তা দূর করবে। সবচেয়ে বড় অস্ত্র, ধর্মীয় গ্রন্থ পড়া। যৌনচিন্তা স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে সরিয়ে রাখতে যথাক্রমে নিয়মিত ও তাৎক্ষনিকভাবে ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ুন। ধ্যান করা আর যোগব্যায়াম করাও আরেকটা উপায়।

৪) সম্মান করতে জানাঃ যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত সম্মান করা। নিজেকে ও সঙ্গীকে সম্মান করতে জানুন।

৫) ভাল বন্ধু হোনঃ বিপরীত লিঙ্গের একজন ভাল ও বিশ্বস্ত বন্ধু বানান। বিপরীত লিঙ্গের মানুষ সম্পর্কে ভাল করে জানুন। অনলাইনে আর্টিকেল পড়তে পারেন।

৬) ভালোবাসার মানুষের সাথে যৌন মিলন করুনঃ ভালোবাসুক কাউকে নিঃশর্তভাবে। আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করলে একে অপরকে ভালোবাসুন। ভালোবাসা যাচাই করুন নিয়মিত। ছয় মাস যদি দেখেন, সে আপনার মনমত হয়েছে, তাহলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন, তাকেই জীবনসঙ্গী করবেন। এবার তার সাথে জড়ান শারীরিক সম্পর্কে। (অনেক প্রশ্ন বা দ্বিমত থাকবে এই ০৬ নং প্রস্তাবনায়- তবে প্রাথমিক একটা ধারণা দিলাম)

যৌনতা টিভি-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনের দুনিয়ার মূলধনের মত। বিক্রি বাড়াতে এগুলো বেশি বেশি দেখাবে আপনাকে। বোঝাবে, আপনি আকর্ষণীয় নন, আপনি সুন্দর নন, আপনার মধ্যে অনেক ঘাটতি আছে। এগুলো বলায় আপনি হীনমন্যতায় ভুগবেন, যার জন্য বিউটি প্রোডাক্ট কিনবেন, হিরো/হিরোইনদের মত হতে চাইবেন আর একাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা চাইবেন- হ্যাঁ আপনি সুন্দর, হ্যাঁ আপনাকে আজ আকর্ষণীয় লাগছে। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়ান। নিজেকে গ্রহণ করুন। নিজের আলোয় নিজেকে আগে আলোকিত করুন।

ভালো থাকবেন।

মনে রাখবেন,

You are Confident!

You are perfect!!

You are the greatest!!!

প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেক আলোচনা করেছি, যা সচরাচর কেউ কাউকে বলে না। আশা করি, আমার কথাগুলো আপনাদের কোন না কোন উপকারে আসবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form