ঈদের খুতবা।




ঈদ অর্থ কি

ঈদ অর্থ আনন্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা। এই দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঈদ। আল্লাহ তা'আলা এ দিনে তার বান্দাকে নিয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করে থাকেন, বারবার এহসান করেন। রমযানের পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। ফিতরা প্রদান ও গ্রহণ, হজ পালন ও কুরবানীর গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি নিয়ামাত বছর ঘুরিয়ে তিনি বারবার বান্দাদেরকে ফিরিয়ে দেন। এতে মানুষের প্রাণে আনন্দের সঞ্চার হয়। এসব কারণে এ দিবসের নামকরণ হয়েছে ঈদ। 


ঈদের ইতিহাস

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন তখন মদীনাবাসীদের মধ্যে বিশেষ দুটি দিবস ছিল, সে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দু'টি দিনের তাৎপর্য কী? মদীনাবাসীরা উত্তর দিল আমরা জাহেলী যুগ থেকে এ দু'দিনে খেলাধুলা করে আসছি। তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ রাববুল আলামীন এ দু'দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দুটি দিন তোমাদেরকে দান করেছেন। আর সেই দিন দু'টি হল : ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। 

আবু দাউদ : ১১৩৪; নাসাঈ : ১৫৫৬


ঈদের খুতবা


১. ঈদের খুতবা শোনা কি

ঈদের খুতবায় উপস্থিত হওয়ার সঠিক বিধান হচ্ছে যে, তা সুন্নাত।

আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে ঈদে উপস্থিত হলাম, অতঃপর তিনি সালাত সম্পন্ন করে বললেন, আমি খুতবা প্রদান করব, তাই যে খুতবা শোনার জন্য বসতে চাইবে সে বসুক, আর যে চলে যেতে চায়, সে চলে যাক।

আবু দাউদ আলএ. হা/১১৫৫ হাদীসটিকে ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন।


২. ঈদের খুতবার সংখ্যা

শাইখ মুহাম্মাদ বিন উসাইমীন রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্যদের সংকলিত হাদীসের দিকে লক্ষ্য করবে, তার জন্য স্পষ্ট হবে যে, নবী সাঃ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার) শুধুমাত্র একটিই খুতবা দিয়েছেন।


৩. খুতবার আগে ঈদের সালাত

ইমাম ইবনু কুদামা রাঃ খুতবার পূর্বে ঈদের সালাত আদায়ের উপর ইজমা (ঐক্যমত) বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনুল মুনযির রহঃ বলেন, রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত আছে যে, তিনি ঈদের দিন খুতবার পূর্বে সালাত আরম্ভ করতেন, তেমনি ভাবে হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনও করতেন, এবং এই মতের উপর মুসলিম বিশ্বের সমস্ত আলেমগণ একমত আছেন। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,

عن ابن عباس قال شهدت العيد مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي بكر وعمر وعثمان رضي الله عنهم فكلهم كانوا يصلون قبل الخطبة

আমি নবী সাঃ, আবু বকর, উমর ও উসমান রাঃ এর সাথে উপস্থিত ঈদের সালাতে থেকেছি, তারা সবাই খুতবার পূর্বে (ঈদের) সালাত আদায় করতেন।

বুখারী তাও, হা/৯৬২, মুসলিম মাশা, হা/২০৮৯ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, নাসাঈ ম. হা/১৫৬৪, তিরমিযী মা, হা/৫৩১, মিশকাত হা. হা/৭০৪


৪. খুতবায় তাকবীর উচ্চারণ

খুতবা কি তাকবীর দিয়ে শুরু করবে? নাকি আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে? এমর্মে দুইটি মত রয়েছে।

১ম মত: মুস্তাহাব হল তাকবীর দিয়ে খুতবার সূচনা করা। আর এতে হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী চার মাযহাবের ঐকমত্য রয়েছে।

২য় মত: আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু করা। ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিম, ইবন বায রহ. এটাকেই গ্রহণ করেছেন; আর ইমাম শাওকানী এ মতের দিকে ঝুঁকেছেন।


৫. ঈদের খুতবার বিষয়বস্তু

হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী চার মাযহাবের ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন যে, ঈদুল ফিতরের খুতবার আলোচ্য বিষয় হবে যাকাতুল ফিতরের বিধি-বিধান।

আর ইমাম শাফেঈ রহ. এক বর্ণনায় জিকিরের তাৎপর্য, তাকওয়ার অসিয়ত, সৎকর্ম সম্পাদনে প্রতিযোগিতা যেমন কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। ইবন বায রহ. এর মতও তাই।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form