১। ঈদের নামাজের ফজিলত
ঈদের সালাতের মহা ফজিলত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ঈদের নামায পরিত্যাগ করেননি; এমনকি মহিলা, একান্তে বাসকারিনী ও ঋতুস্রাব ওয়ালী মহিলাদেরকেও ঈদের জামাতে শরীক হতে নির্দেশ দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কেরাম কখনােই এই সুন্নত ত্যাগ করেননি। এ থেকেই ঈদের নামাজের গুরুত্ব ও ফযিলতের বিষয়টি অনুমান করা যায়। তাছাড়া এতে আল্লাহ তাআলার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করা হয়, আল্লাহর বিধি-বিধানকে প্রকাশ ও সম্মান করা হয় এবং কল্যাণ কাজে মুসলমানদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
২। ঈদের নামাজ প্রবর্তনের হিকমত
ঈদের জামাত ও খুতবা পাঠের অন্যতম হিকমত হচ্ছে, কোনাে সম্মেলন যেন আল্লাহর স্মরণ এবং দ্বীনের বিধি-বিধানের গুরুত্ব প্রকাশ ব্যতীত অনুষ্ঠিত না হয়। পাশাপাশি এর মাধ্যমে শরীয়তের মূল উদ্দেশ্যসমূহের একটি উদ্দেশ্য সাধিত হয়, আর তা হচ্ছে প্রত্যেক জাতির প্রয়োজন একটি মহড়া, যাতে তারা তাদের শৌর্যবীর্যের প্রদর্শনী ও সংখ্যার আধিক্য দেখাবে। এ কারণেই মুস্তাহাব হচ্ছে, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, পুরুষ-মহিলা একান্তবাসী মেয়ে ও ঋতুস্রাব ওয়ালী মহিলা নির্বিশেষে সকলেই ঈদগাহে গমন করবে, যাওয়া ও আসার পথ ভিন্ন করবে; যাতে করে উভয় পথের লোকেরা মুসলিমদের ক্ষমতা দেখতে পায়।
৩। ঈদের নামাজের বিধান
ঈদের হুকুম (বিধান) সম্পর্কে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবে বলিষ্ঠ মত হলাে যে, তা ফরজ। তার দলিল:
ক. মহান আল্লাহ এই সালাতের আদেশ দিয়েছেন
সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত (ঈদের নামায) আদায় কর এবং কুরবানী কর।
কারণ, মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করা ফরয। আর নবী সাঃ মহিলাদেরও ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
খ. প্রিয় নবী সাঃ ঈদের সালাত সর্বদা আদায় করেছেন এবং তিনি সে কখনাে এই সালাত ছাড়েননি।
গ. ঈদের সালাত দ্বীন ইসলামের প্রকাশ্য নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত, আর ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য নিদর্শন হচ্ছে ফরজ; যেমন আযান ইত্যাদি।
আর সেই জন্য শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেন, আমরা এই মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছি যে, ঈদের সালাত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয এবং যারা বলেন যে, তা ফরয নয়; উক্ত মতটি দলীল প্রমাণ হতে অনেক দূরে। কেননা, ঈদ হচ্ছে ইসলামের একটি নিদর্শন এবং মুসলিমগণ এই ঈদে জুমার চেয়েও বেশি সংখ্যায় সমবেত হন এবং তাতে তাকবীরের বিধান দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যারা বলেন যে, তা ফরযে কিফায়া উক্তিটি যুক্তিযুক্ত নয়।
ঈদের সালাত ফরয, এই উক্তিটির সমর্থন করেছেন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, ইমাম শাওকানী, ইমাম ইবনে সাদী এবং ইবনে উসাইমীন রহঃ। তাই ঈদের সালাতে উপস্থিত হতে গাফিলতি কারীরা আনন্দ-উৎসবের দিনে বড় গুনাহগার ও মহান আল্লাহর পুরস্কারের দিবসে নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত।
৪। ঈদের নামাজের সময়
ঈদের সলাতের সময়, সূর্যের এক বর্শা পরিমাণ উঁচু হওয়া থেকে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত। ইমাম ইবনে বাত্তাল রহঃ বলেন, ফুকাহাগণ এই ব্যাপারে একমত যে, ঈদের সালাত সূর্যোদয় হওয়ার আগে বা সূর্যোদয় হওয়ার সময় পড়া যাবে না, প্রকৃতপক্ষে যে সময় নফল সালাত পড়া জায়েজ, সে সময়টি ঈদের সালাতের সময়।
আল্লামা ইমাম ইবনুল কাইয়ুম এ বলেন, নবী সাঃ ঈদুল ফিতরের সালাত বিলম্ব করে পড়তেন এবং ঈদুল আযহা শীঘ্রই আদায় করতেন। ইবনু উমার রাঃ সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (ঈদের সালাতের জন্য) বের হতেন না।
৫। খুতবার আগে ঈদের নামাজ
ইমাম ইবনু কুদামা রহঃ খুতবার পূর্বে ঈদের সালাত আদায়ের উপর ইজমা (ঐক্যমত) বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনুল মুনযির রহঃ বলেন, রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত আছে যে, তিনি ঈদের দিন খুতবার পূর্বে সলাত আরম্ভ করতেন, তেমনি ভাবে হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনও করতেন, এবং এই মতের উপর মুসলিম বিশ্বের সমস্ত আলেমগণ একমত আছেন। ইবনে আব্বাস বলেন,
আমি নবী সঃ , আবু বকর, উমর, ও উসমান রাঃ এর সাথে উপস্থিত ঈদের সালাতে থেকেছি, তারা সবাই খুতবার পূর্বে (ঈদের) সলাত আদায় করতেন।
বুখারী তাও, হা/৯৬২, মুসলিম মাশা, হা/২০৮৯ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, নাসাঈ ম. হা/১৫৬৪, তিরমিযী মা, হা/৫৩১, মিশকাত হা. হা/৭০৪
৬। ঈদের নামাজের স্থান
প্রিয় নবী সাঃ মসজিদ বাদ দিয়ে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন। অনুরূপ খলীফাগণও তার উপর আমল করতেন। নবী সাঃ মসজিদ কাছে থাকা সত্ত্বেও ঈদগাহে গমন করতেন। কারণ, সেটাই ছিল উত্তম এবং তিনি নিজ উম্মতের জন্য উত্তম কাজ গুলো ছাড়া অন্য কিছুই চালু করতেন না। তবে বর্তমানে মক্কাবাসীদের হারাম শরীফে ঈদের সালাত আদায়ের কারণ এই যে, মক্কা হচ্ছে পাহাড়-পর্বতে ভরা। আর সেখানে থেকে খোলা মাঠ অনেক দূরে।
৭। ঈদের নামাজের জন্য কোন আযান নেই
ইবনে আব্বাস ও জাবির রাঃ হতে বর্ণিত আছে, তারা বলেন, ঈদুল-ফিতর ও ঈদুল আযহার (সালাতের) জন্য আযান দেওয়া হতো না। জাবের বিন সামুরা রাঃ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সঙ্গে বহুবার ঈদের সলাত পড়েছি; বিনা কোন আযান ও ইকামতে।
মুসলিম মাশা, হা/২০৮৮, আবু দাউদ আলএ, হা/১১৪৮, মিশকাত হা, হা/১৪২৭
ইমাম মালিক বলেন, এটিই হচ্ছে সুন্নাত, যাতে আমাদের কোন মতভেদ নেই এবং ইবনু কুদামা এর উপর ইজমা' (ঐক্যমত) উল্লেখ করেছেন। ঈদের সালাতের জন্য একত্রিত করার উদ্দেশ্যে “আসসলাতু জামিআহ” (অর্থাৎ, সালাতের জন্য একত্রিত হয়ে যাও) বা অন্য কোন বাক্য দ্বারা কোন ডাক দেয়া হত না। বরং নবী সাঃ ঈদগাহে পৌঁছে গেলেই সালাত আদায় করে নিতেন।
৮। ঈদের নামাজের আগে ও পরে নফল পড়ার বিধান
ইবনু আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
নবী সাঃ ঈদুল ফিতরের দিন (ঈদগাহের উদ্দেশ্যে) বের হলেন এবং দুই রাকা'আত সলাত আদায় করলেন, উহার আগে কিংবা পরে কোন সালাত পড়লেন না।
বুখারী তাও. হা/৯৩১ ও মুসলিম মাশা. হা/১১৬১, মিশকাত হাএ. হা/১৪৩০
আবু সাঈদ খুদরী রাঃ হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
রাসূল সাঃ ঈদের পূর্বে কোন সালাত পড়তেন না, কিন্তু যখন বাড়ি পৌঁছতেন, দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন।
ইবনে মাজাহ তাও. হা/১২৯৩, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
উক্ত দুটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঈদের সালাতের আগে বা পরে কোন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা নফল সালাত নেই, যা ইবনে আব্বাসের হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট।
তবে যদি কেউ ঈদের সালাতের পর বাড়িতে সলাত আদায় করে তবে তা সুন্নত হবে; যদি তার সলাতুযযুহা (চাশতের সালাত) পড়ার আমল থাকে, যা আবু সাঈদ রাঃ এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়।
যখন ঈদের সলাত মসজিদে আদায় করা হবে, তখন দুই রাকাত সালাত পড়েই বসবে। কেননা, আবু কাতাদা রাঃ বলেন, নবী সাঃ বলেছেন,
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বসার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিবে।
বুখারী তাও, হা/৪৪৪, মুসলিম মাশা. হা/১৬৮৭, নাসাঈ ম, হা/৭৩০, তিরমিযী মা. হা/৩১৬, মিশকাত হা. হা/৭০৪
৯। ঈদের নামাজের নিয়ত
নিয়ত মানে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না। তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।
কুরআন ৯৮/৫
আর মহানবী সঃ বলেন,
সমস্ত কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যার সে নিয়ত করে।
সহীহ বুখারী হাদিস নং ১
সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত করা জরুরী; কিন্তু পড়া বিদআত।
১০। ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
ক। ঈদের নামাজ কয় রাকাত
সর্বসম্মতিক্রমে ঈদের নামাজ দুই রাকাত। ইবনে কুদামা, ইমাম নববী ও মাওয়ারদী রহ. এ ব্যাপারে ইজমা বর্ণনা করেছেন।
খ। ঈদের নামাজের তাকবীরের বিধান
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর বলা সুন্নত। এটাই মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহের মত।
গ। ঈদের নামাজের তাকবীর সংখ্যা
প্রথম রাকাতে রুকুর তাকবীর ছাড়া সাত তাকবীর দিবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে উঠে দাঁড়ানোর তাকবীর ছাড়া পাঁচ তাকবীর দিবে। এটাই ফুকাহায়ে সাব’আর (তাবেঈ গণের মধ্যে প্রখ্যাত সাতজন ফকীহগণ) অভিমত। আমর বিন শুয়াইব আপন পিতা হতে এবং তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন,
নবী সঃ ঈদের সালাতে বারাে তাকবীর দিয়েছেন; প্রথম রাকাতে সাত এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর।
ইবনে মাজাহ তাও, হা/১২৭৮ ও আহমাদ, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
প্রত্যেক তাকবীরের সাথে তিনি উভয় হাত উঠাতেন। এই বিষয়ে ওয়াইল বিন হুজরের হাদীস বর্ণিত আছে যে, তিনি সঃ প্রত্যেক তাকবীরের সাথে আপন হাত দুখানা উঠাতেন।
ঘ। তাকবীরের মাঝে জিকির
এই ব্যাপারে নবী সঃ থেকে কোন কিছু উল্লেখিত হয়নি। তবে উকবা বিন আমের রাঃ বলেন, আমি ইবনে মাসউদ রাঃ কে জিজ্ঞেস করলাম যে, ঈদের তাকবীর গুলোর পরে কী বলব? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগাণ করবে এবং নবী সঃ এর উপর সলাত (দরূদ) পাঠ করবে।
ঙ। অতিরিক্ত তাকবীরের সময় হাত উঠানো
অতিরিক্ত তাকবীরের সময় হাত উঠানো সুন্নত। হানাফী, শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ ফকিহ এ মত পোষণ করেন। আর এটা কোন কোন সালফে সালেহীনেরও মত।
চ। অতিরিক্ত তাকবীরের পূর্বে ছানা পাঠ
সুন্নত নিয়ম হল, অতিরিক্ত তাকবীরসমূহের পূর্বে উদ্বোধনী দোয়া (ছানা) পাঠ করে নেয়া এবং অতিরিক্ত তাকবীর বলার পর আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম ও বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়ে সূরা ফাতিহা শুরু করা। এটিই হানাফী, শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাবের অধিকাংশ আলেমের মতামত।
ছ। প্রত্যেক দুই তাকবীরের মাঝে যা বলবে
১ম মত: সুন্নত হল আল্লাহর যিকির করা। যেমনটি ইমাম শাফেঈ এবং আহমদ রহ. এর মত। ইবনুল মুনযির এবং ইবনে তাইমিয়া রহ. এটিকে পছন্দ করেছেন।
২য় মত: এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বর্ণিত নেই; বরং নামাযী ব্যক্তি তাকবীর সমূহ অবিরাম বলে যাবে। এটাই হানাফী ও মালেকীদের মাযহাব। ইমাম নববী রহ. এক্ষেত্রে অধিকাংশ আলেমের প্রাধান্য বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাযম, সান'আনী এবং ইবনে উসাইমিন এটিকেই গ্রহণ করেছেন।
জ। ঈদের সালাতে স্বজোরে কেরাত পড়া
ঈদের সালাতে ইমাম স্বজোরে কেরাত পড়বে। ইবনে কুদামা এবং ইমাম নববী রহ. এক্ষেত্রে ইজমা বর্ণনা করেছেন।
ঝ. ঈদের সালাতের কিরাত
ঈদের সালাতের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সূরা কৃাফ ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সূরা ক্বামার পাঠ করা সুন্নাত। কেননা, নবী সঃ উভয় ঈদে উক্ত সূরা দুটি পাঠ করতেন যা আবু ওয়াকিদ আল-লাইসীর হাদীসে বর্ণিত আছে।
অথবা প্রথম রাকাআতে সূরা আ'লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাশিয়াহ। কারণ, নুমান বিন বাশির রাঃ এর বর্ণিত হাদীসে আছে যে, নবী সঃ ঈদের সালাতে সূরা দুটি পাঠ করতেন।
মুসলিম আশা, হা/২০৫, মিশকাত হা. হা/৮৪০
যখন ঈদ ও জুমা একই দিনে মিলিত হবে তখন উভয় সূরা ঈদ ও জুমআতে পাঠ করলে কোন আপত্তি নেই; কেননা উভয় সূরা উক্ত দুই সালাতে পাঠ করা সুন্নাত।
১১। ঈদের জামাতে মাসবুক ব্যক্তির নামাজের বিধান
যদি কোন মুসল্লি বিলম্বে এসে অতিরিক্ত তাকবীর সমূহ হাতছাড়া করে শুধু রাকাতে শরীক হয়, তবে ছুটে যাওয়া ঐ তাকবির সমূহের কাযা করবে না। এটাই শাফেঈ এবং হাম্বলীদের মাযহাব। ইবনে বায এবং ইবনে উসাইমিন রহ. এ মত পছন্দ করেছেন।
১২। ঈদের নামাযের কাযা করা
(ক) যদি ঈদের সংবাদ সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে পড়ার পর (বিকেলে) জানা যায়, তাহলে পরের দিন (ঈদের) সলাত আদায় করবে। কারণ, হাদীসে বর্ণিত আছে'
উমাইর বিন আনাস রাঃ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আনসার গোত্রের তার জনৈক চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একবার মেঘমালার কারণে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ আমরা দেখতে পাইনি, তাই আমরা রোজা অবস্থায় সকাল করি। অতঃপর সেই দিনের শেষাংশে একটি যাত্রীদল এসে সাক্ষ্য দিল যে, গতকাল তারা নতুন চাঁদ দেখেছে। ফলে নবী সঃ সেই দিন সিয়াম (রোযা) ভঙ্গ করার এবং আগামী দিন ঈদের (সালাতের) জন্য (ঈদগাহে) বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন।
আহমদ ও নাসাঈ, আবু দাউদ আলএ. হা/১১৫৯, সুনান আদ-দারাকুতনী মাশা, হা/১৪, আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন
(খ) যদি ইমাম (ঈদের সালাতের) তাশাহুদে থাকেন (এমতাবস্থায় কেউ জামাতে শরীক হয়), তাহলে সেও তাশাহ্হুদে বসে যাবে, তারপর (ইমাম) যখন সালাম ফিরে নিবেন, তখন সে দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই রাকাআত সলাত আদায় করবে, দুই রাকা'আতেই তাকবীরগুলি পাঠ করবে।
(গ) যদি কোন ব্যক্তি ঈদের সলাত ইমামের সাথে আদায় করতে না পারে (ছুটে যায়), তবে এ বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে।
১ম মতঃ সে চার রাকাত কাজা আদায় করবে, এই মতটি হচ্ছে ইমাম আহমাদ ও ইমাম সাওরীর। তাদের দলিল হচ্ছে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর বাণী, যার ইমামের সাথে ঈদের সালাত ছুটে গেল সে যেন চার রাকাআত আদায় করে নেয়।
২য় মতঃ সে দুই রাকাত কাযা আদায় করবে। ইমাম বুখারী বলেন, যদি ঈদের সলাত ছুটে যায়, তাহলে দুই রাকাত আদায় করবে এর অধ্যায়। এইমত অনুযায়ী মহিলারা এবং যারা বাড়িতে ও পল্লী গ্রামে থাকে, তারাও দুই রাকাত পড়বে। কারণ, নবী সঃ এর বাণী: এটি আমাদের মুসলিমদের ঈদ (বুখারী ও মুসলিম) এবং আনাস বিন মালিক আপন স্বাধীন কৃত দাস ইবনে আবি উতবাকে “যাবিয়া” নামক স্থানে তার পরিবার পরিজন ও পুত্রদের একত্রিত করার আদেশ দেন এবং শহরবাসীদের মত তাকবীরের সহিত (ঈদের) সলাত আদায় করেন।
১৩। জুমা ও ঈদ একত্রিত হওয়া
ক. ইয়াস বিন আবি রামলাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুআবিয়া বিন আবি সুফিয়ান রাঃ এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, এমতাবস্থায় তিনি যায়েদ বিন আরকাম রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সঃ এর সাথে এমন কোন দিন উপস্থিত ছিলেন, যেই দিন দুই ঈদ (ঈদ ও জুমা) একত্রিত হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি প্রশ্ন করলেন, তাহলে তিনি কেমন করেছিলেন? তিনি বললেন, নবী ঈদের সলাত আদায় করলেন, তারপর জুমআর ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে বললেন, যে চাইবে, (জুমার) সালাত আদায় করবে।
আবু দাউদ আলএ, হা/১০৭০ ও ইবনু মাজাহ, সুনান আদ-দারেমী মাশা, হা/১৬১২, আল্লামা আলবানী এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
খ. আবূ হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সঃ বলেছেন, তোমাদের আজকের এই দিনে দুটি ঈদ একত্রিত হয়েছে, তাই যে চাইবে তার জুমআর জন্য (এই ঈদের সালাত) যথেষ্ট হবে, তবে আমরা জুম'আর সালাত আদায় করবাে।
পূর্বে উল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যক্তি ঈদের সালাত আদায় করবে সঠিক মতে জুম'আর সলাত না আদায় করলেও তার জন্য যথেষ্ট হবে।
১৪। সফরে ঈদের সালাত
ক. যদি কোন ব্যক্তি সফরে থাকে এবং সে (স্থানীয়) লোকদের কাছে (ঈদের) সলাত আদায় অবস্থায় উপস্থিত হয়, তবে সে যেন তাদের সাথে (ঈদের) সলাত আদায় করে নেয়। অনুরূপ হচ্ছে জুমার বিধান।
খ. যদি কোন দল সফর করে তবে তাদের জন্য জুমা বা ঈদের জামাত প্রতিষ্ঠিত করা চলবে না এই জন্য যে, তা সফরে শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ, এটা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হচ্ছে স্থায়ীভাবে বসবাস।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।