ভোটার আইডি কার্ড চেক করার মাধ্যমে আমরা সহজেই জানতে পারি যে সেই আইডি কার্ডটি আসল কি না। আর এই পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনের মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়েই করা যায়। আপনার কাছে যদি একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থাকে তাহলে আপনি নিজেই যে কারোর ন্যাশনাল আইডি কার্ড (NID) বা জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনের মাধ্যমে চেক বা যাচাই করে দেখতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড কি?
ভোটার আইডি কার্ড কি এটা সম্পর্কে জানে না এরকম মানুষ আমার মনে হয় বাংলাদেশে নাই। এরপরেও ভাষাগত পার্থক্যের জন্য অনেকের বুঝতে সমস্যা হতেও পারে বা আমি এখানে ভোটার আইডি কার্ড চেক বলতে কি বুঝাতে চেয়েছি এটাও অনেকের বুঝতে সমস্যা হতে পারে। তাই ভোটার আইডি সম্পর্কেই আগে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আপনার বয়স ১৮ বছর হবার পরেই আপনি জাতীয় পরিচয় বা এন আই ডি পেতে পারেন। আর ১৮ বছর বয়সের পর প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও এটি সরকারি ভাবেই দেয়া হয়ে থাকে। আর এই জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরণ সংরক্ষণ ও সকল প্রকার প্রক্রিয়া করে থাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় পরিচয় পত্র প্রচলিত হয় ২০০৮ সালের জুলাই মাসের ২২ তারিখে। জাতীয় পরিচয় পত্রের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হলোঃ http://nidw.gov.bd
ভোটার আইডি কার্ড বলতে বুঝানো হয় জাতীয় পরিচয় পত্র বা ন্যাশনাল আইডেন্টিটি। ইংরেজিতে বলা হয় National Identity (NID) । জাতীয় পরিচয় পত্র হলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রথম ও প্রধান নাগরিকত্বের পরিচয়। আপনি যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক এইটা প্রমান হয় আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড এর মাধ্যমে।
আর জাতীয় পরিচয় পত্র কে ভোটার আইডি কার্ড বলা হয় কারণ আপনি জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া বাংলাদেশে ভোট দিতে পারবেন না। শুধু ভোট না এটি ছাড়া একজন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের কোন সুযোগ সুবিধাই আপনি পাবেন না। আর সেজন্যই আমাদের কাছে জাতীয় পরিচয় এতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
ভোটার আইডি কার্ড চেক করবেন কেন?
ভোটার আইডি কার্ড চেক করা আপনার যেকোনো কারনে প্রয়োজন হতে পারে। মনে করেন আপনার একটা শপ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আর আপনি আপনার ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন কর্মচারী নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। এখন আপনি যাকে নিয়োগ দিবেন তাকে হয়তো আপনি চেনেন না আর সিকিউরিটির জন্য তার থেকে ছবি ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড জমা নিলেন।
এখন আপনি যে আইডি কার্ড জমা নিলেন হতেও তো পারে সেই আইডি কার্ড আসল না। সেটি নকল বা বানানো আইডি কার্ড। যদি সে আপনাকে নকল আইডি কার্ড দিয়ে থাকে, এর মানে হলো নিশ্চয়ই তার কোন খারাপ উদ্দেশ্য রয়েছে। আর আপনি যদি সেটি আগেই আইডি কার্ড চেক করার মাধ্যমে জানতে পারেন, তাহলে আপনি তাকে বাদ দিতে পারেন এমনকি চাইলে তাকে পুলিশেও দিতে পারেন। এতে করে আপনার যে ক্ষতি হতো সেটা থেকে আপনি কিন্তু বেচে গেলেন।
এছাড়াও হতে পারে আপনি বাসার মালিক, আর আপনার ভাড়াটিয়া দের বাসা ভাড়া নেয়ার সময় আইডি কার্ড জমা দিতে হয়। এখন যদি কোন ভাড়াটিয়া খারাপ কোন উদ্দেশ্যে আপনার বাসা ভাড়া নিতে চায় তাহলে সে অবশ্যই আসল আইডি কার্ড আপনাকে জমা দিবে না। তাহলে আপনি আগেই তার বিষয়ে জানতে পারবেন ও ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যার ফলে ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা থেকে আপনি নিরাপদ থাকলেন।
এইসব ছাড়াও, অনলাইন লেনদেন এর ক্ষেত্রে বা আপনি কোন পুরাতন পন্য কিনতে গেলেও দেখবেন যে আপনাকে সিকিউরিটি হিসাবে আইডি কার্ড দেয়া হবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে প্রতিটি কাজেই জাতীয় পরিচয় পত্র খুবিই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেকারণেই যে কারোর আইডি কার্ড (NID) অনলাইনে চেক করে নেয়াটাও জরুরি। আর এই কারনেই আমার আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা।
ভোটার আইডি কার্ড চেক কি আইনত বৈধ?
হ্যাঁ, সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই করে দেখা সম্পুর্ন বৈধ। আপনার নিজের ভোটার আইডি কার্ড চেক করে দেখতে তো কোন সমস্যা নাই। এর বাইরেও যদি আপনার অন্য কারোর আইডি কার্ড সংরক্ষণের অনুমতি থাকে তবে আপনি তার ভোটার আইডি কার্ড ও চেক করে দেখতে পারেন আপনার নিজের সিকিউরিটির জন্য। তবে অবশ্যই অবৈধ ভাবে কারোর আইডি কার্ড সংরক্ষণ ও যেকোন কিছুই দণ্ডনীয় অপরাধ।
মনে করি, আপনি একজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তাহলে আপনার অবশ্যই সেই ব্যবসার জন্য সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স না অনুমতি নিতে হয়েছে এবং আপনি সরকারকে প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট পরিমানে কর প্রদান করছেন তাহলে আপনি আপনার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ভোটার আইডি কার্ড সংরক্ষণের অধিকার রাখেন আর আপনি চাইলে সেই আইডি কার্ড গুলো চেক করার অধিকার ও রয়েছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ছাড়াও, বাড়ি ভাড়া দেবার সময় বা কোন পন্য কেনার সময় অথবা কোন আর্থিক লেনদেনের সময় অথবা যেকোনো কাজের সিকিউরিটি হিসেবে আইডি কার্ড দেয়া হলে আপনি সেই আইডি কার্ড যাচাই করে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার কোন অন্যায় হবে না। কিন্তু আইডি কার্ডের তথ্য অন্য কাউকে প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এইসব কাজ কখনো করতে যাবেন। এবং এসব করে অপরাধী প্রমাণ হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল সহ আপনার জেল জরিমানা ও হতে পারে।
সুতরাং আপনার যদি কারোর ভোটার আইডি কার্ড সংরক্ষণের অধিকার থাকে তবেই আপনি তার আইডি কার্ড সংরক্ষণ ও যাচাই করবেন। অন্যথায় এমনটি করতে যাবেন না।
ভোটার আইডি কার্ড চেক করবেন কিভাবে?
এতোক্ষণ তো এইসব আলোচনা করতে গিয়ে মূল টপিক নিয়ে কোন কথা বলাই হলো না। তো এইবার চলুন দেখা যাক কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে হয়। ভোটার আইডি কার্ড সরকারি ডেটাবেজ থেকে যাচাই করার জন্য আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই চলবে।
ভোটার আইডি কার্ড চেক করার জন্য প্রথমেই এই লিংকে প্রবেশ করুন।
এখান থেকে ভোটার আইডি কার্ড ও ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ নাম্বার দিয়ে তথ্য যাচাই করতে পারবেন।
এখানে প্রবেশ করার পর প্রথমেই দুইটি অপশন দেখ- বেন।
- ফর্ম নম্বর
- এন. আইডি. নম্বর
আপনি যদি এন আইডি দিয়েই চেক করতে চান তাহলে এন আইডি সিলেক্ট করুন আর যদি ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ নম্বর দিয়ে আইডি কার্ড দেখতে চান তাহলে ফর্ম নাম্বার সিলেক্ট করুন। এর পরের বক্সে জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ দিন ও শেষ বক্সে ছবিতে দেখতে পাওয়া সংখ্যা টাইপ করুন। এটা হলো ক্যাপচা। ক্যাপচা পুরন করার জন্য বাম পাশে ছবিতে দেয়া বর্ন ও সংখ্যা ডান পাশের খালি ঘরে লিখুন। নিচের স্ক্রিনশট টি দেখুন।
এখন সব কিছু একবার চেক করে দেখুন, ঠিক আছে কিনা। আপনি যদি ভূল তথ্য দিয়ে থাকেন তাহলে কখনোই ভোটার তথ্য দেখতে পাবেন না। এরপর নিচে থাকা ভোটার তথ্য দেখুন বাটনে ক্লিক করুন।
যদি আপনি সকল তথ্য সঠিক ভাবে দিয়ে থাকেন আর যদি জাতীয় পরিচয় পত্রটি আসল হয়ে থাকে, তাহলে সাথে সাথেই ভোটার আইডি কার্ডের সকল তথ্য দেখতে পাবেন। আর যদি সকল তথ্য সঠিক ভাবে দেয়ার পরেও কোন তথ্য পাওয়া না যায়, তাহলে বুঝতে হবে আইডি কার্ড টি নকল বা বানানো। নিচের স্ক্রিনশট টি দেখুন, এখানে সকল তথ্য চলে এসেছে।
আপনার যদি জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিবর্তে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হয়, তবে সেক্ষেত্রে আমার লিখা এই আর্টিকেল পড়ে করতে পারেন।
শেষকথাঃ
আপনি যদি পুরো আর্টিকেল টি ভালোভাবে পড়েন তাহলে আপনার অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড চেক বিষয়ে আর কোন কিছু জানার বাকি থাকবে না। এর পরেও কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে অথবা কিছু জানার থাকলে সেটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমি চেষ্টা করব সেই বিষয়ের সমাধান করার জন্য।