মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী : ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম বিয়ে সম্পর্কে যে ভারসাম্যপূর্ণ মতবাদের কথা বলে তা নেহায়ত পূর্ণাঙ্গ এবং বেনজীর। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে কেবল মানবীক চাহিদা পূর্ণ করা এবং স্বভাবজাত আবেগ মত্ততার প্রশান্তির নাম নয়। মানুষের যেমন অনেক মানবীক প্রয়োজন রয়েছে তেমনি বিয়েও মানুষের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন।
এজন্য ইসলাম মানুষের স্বভাজাত প্রয়োজনকে জায়েয এবং শীলিত পদ্ধতিতে পুরা করার অনুমতি দিয়েছে। মানব রক্ষার জন্য ইসলাম বিয়েকে অত্যাবশ্যক করেছে। আখ্যায়িত করেছে বিয়েকে ইবাদত হিসেবে। নবীজি (সা.) বিয়েকে সুন্নত বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসের ভাষ্য, ‘বিয়ে আমার সুন্নত। অতএব যে আমার সুন্নত পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’-(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৩৯০)। বিয়ে ইমানের অর্ধেক। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকি অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।’-(মিশকাতুল মাসাবিহ ২/২৬৮)।
বিয়ে আম্বিয়ায়ে কেরামের সুন্নত। এ মর্মে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘আপনার পূর্বে প্রেরণ করেছি অনেক রাসুল এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি।’-(সূরা রাদ: ৩৮)। এ হাদিস সুস্পষ্ট বার্তা দেয়, নবীদেরও পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তুতি ছিল। হজরত আবু আইয়ুব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নবী-রাসুলগণের চারটি সুন্নত রয়েছে।
বিয়ের গুরুত্ব আরো কিছু হাদিস দ্বারা অনুমিত হয়:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতায় অধিক সহায়ক। আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয় সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা তার যৌনবাসনাকে দমিত করবে।’-(সহিহ বুখারি ২/৭৫৮)।
একবার কিছু সাহাবি নবীজি (সা.) এর কাছে তাদের যৌনবাসনাকে খতম করে দিতে অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে এটা করতে নিষেধ করে দিলেন এবং বিয়ে না করাকে জীবন থেকে পলায়ন করা আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য ইসলাম জীবন থেকে পলায়ন করাকে অপছন্দ ঘোষণা করেছে। নবী কারিম (সা.) বলেন, মানুষের কি হলো? তারা এমন এমন কথা বলে। কিন্তু আমি নামাজ পড়ি এবং ঘুমাই, নফল রোজা রাখি, আবার কখনও রাখি না। আবার বিয়ে-শাদিও করি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’-( সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪০১)।
বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদাই পুরা হয় না; বরং অন্তরের প্রশান্তি মানসিক প্রশান্তিসহ সব রকমের প্রশান্তি অর্জিত হয় এতে সহজতরভাবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ‘তার এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ করো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন আছে সেসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’-(সূরা রূম: ২১)।
এ আয়াত দ্বারা নারীদের গুরুত্ব বুঝা যায়, নারী পুরুষের জন্য অমূল্য তোহফা। প্রশান্তির কেন্দ্রবিন্দু। এজন্য যে পুরুষ নারীর মূল্যায়ন করে সে সফলতার জীবন-যাপন করে। স্বভাজাত প্রয়োজনীয় হওয়া সত্তে¡ও যদি পুরুষ বিয়ে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টায় থাকে তখন তাকে ভয়ানক ফলাফলের সম্মুখীন হতে হয়। বিয়ে ব্যতীরেকে জীবনশৃঙ্খলা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
ইতিহাসের ব্যতিক্রম কিছু দিক এবং কিছু বিশেষ ধর্মীয় চিন্তার লোকদের বাদে দুনিয়াতে সব সময় সকল মানুষ সর্বকালে বিয়েকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার করেছে। ইতিহাস সাক্ষী বিয়ে-শাদি থেকে ব্যতিক্রম কখনও কোনো জাতি এবং ধর্ম ছিল না। প্রত্যেক ধর্ম এবং জাতি নির্বীশেষে সবাই নির্ধারিত রীতিনীতি এবং প্রথা ব্যতীত ছেলে-মেয়ের সম্পর্ককে খারাপ জেনেছে এবং চারিত্রিক অবনতি মনে করেছে। যদিও প্রত্যেক ধর্মের বিয়ে-শাদির নিয়ম-নীতি আলাদা আলাদা। তবে বিয়ে-শাদি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ব্যাপারটিতে সকলেই একমত।
ইসলাম স্বভাজজাত এবং ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আল্লাহর সেই ফিতরত অনুযায়ী চলো, যে ফিতরতের ওপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়।’-(সুরা রুম: ৩০)। যদি মানুষ বিয়ে থেকে পলায়ন করে। বৈধ এবং ধর্মীয়মতে নিজের চাহিদা না মেটায়, তখন সে অবৈধ এবং অভদ্র পদ্ধতিতে সেই চাহিদা পুরা করে। যার ফলে সে সব রকমের মন্দ এবং নির্লজ্জ কাজে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক ফিতরতের সীমালঙ্গন করে। তখন সে তো বরবাদ হয়ই। বরং অন্যদেরকেও বরবাদ করে ছাড়ে। এতে করে পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। যেমন লা ওয়ারিস নিষ্পাপ শিশু এখানে সেখানে পাওয়া যায়। গর্ভপাত ঘটানোর মতো খুবই অশ্লীল চরিত্রের বিষয়টি অহরহ ঘটতে থাকে। পশ্চিমা সমাজের জন্য এ বিষয়গুলো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে নিত্যনৈমিত্তিক। ইউরোপ ও আমেরিকায় অনেক লোক এই করূণ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে। ওইসব দেশে অনেক লোক লা ওয়ারিস হিসেবে জীবনযাপন করছে।
এজন্য ইসলাম বিয়েকে এতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে। পুরুষ মহিলার বিয়ের শীলিত বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। বিয়ের মাধ্যমে বংশ-খান্দানের অস্তিত্ব টিকে থাকে। সমাজের জš§ হয়। ঘর-বাড়ির নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলাম বিয়ের মাধ্যমে বনি আদমের বংশের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সঙ্গে সহিহ-শুদ্ধ তরিকায় বংশের বৃদ্ধি ঘটায়। এ বংশের মধ্যে যে কোন ধরনের বিচ্ছিন্নতাকে অপছন্দ করে।
এ ব্যাপারে কোরানের ঘোষণা: ‘তিনিই পানি দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক আত্মীয়তা দান করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’-(সূরা ফুরকান: ৫৪)। ইসলাম মানবীক জীবনকে আল্লাহর দাসত্ব এবং রাসুলে কারিম (সা.) এর আদর্শে টেলে সাজানো দেখতে চায়। বিয়ে আত্মিক এবং চারিত্রিক উন্নতি সাধনের জন্য প্রতিবন্ধক নয় বরং উন্নতির রাজপথ। আধ্যাত্মিকতা এবং সুমহান চরিত্রে সবচে’ উঁচু মর্যাদা এবং উঁচু মাপকাঠি ছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম। সেই আম্বিয়ায়ে কেরামের ব্যাপারেও বলা হয়েছে, তারা বিয়ে-শাদি করতেন এবং তারাও সন্তানের জনক ছিলেন। বিয়ের পর বাসা-বাড়ির যে দায়-দায়িত্ব মানুষের আসে। হক আদায় করার যে বিষয়টি সামনে চলে আসে তা যদি মানুষ ইসলামী শিক্ষা এবং নববী আদর্শ অনুযায়ী আদায় করে তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে আত্মীক এবং চারিত্রিক উন্নতির জন্য উত্তম মাধ্যম। এ কারণে ইসলাম এক দিকে বৈরাগ্যতাকে সাপোর্ট করেনি। অন্যদিকে মানুষকে লাগামহীন ছেড়ে দেয়নি। ইসলাম মানুষের জীন্দেগিতে ভারসাম্য এবং মধ্যমপন্থা সৃষ্টি করে। ইসলামের এই মধ্যমপন্থা এবং ভারসাম্যপূর্ণ মতাদর্শে মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। বিয়ের ব্যাপারে ইসলাম ভারসাম্যতার যে পরিপূরক চিন্তা ও বাস্তবিক মতাদর্শ পেশ করেছে সে ব্যাপারে ইসলামের উপমা ইসলামই।
বিয়ে ভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দেয়: আল্লাহ পাক সমস্ত মানুষকে মানব সৃষ্টির প্রক্রিয়া হিসেবে একজন মানব হজরত আদম (আ.) থেকে সৃষ্টি করেছেন। একজন মানব থেকে সকল মানুষের সৃষ্টি এতে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা পাওয়া যায়। এই ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমেই পারস্পরিক সহানুভ‚তি ও সহমর্মিতায় উৎসাহিত হয়েই একে অন্যের অধিকারের প্রতি যতœশীল হবে। থাকবে না ধনী-গরিবের ব্যবধান। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন, আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাক এবং আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’-(সূরা নিসা: ১)।
কেমন নারী বিয়ে করতে হবে: বিয়ে এমন নারীকে করা ভালো যে নারী স্বামীকে অত্যন্ত ভালোবাসবে এবং বেশি সন্তান জš§ দেবে। এ মর্মে আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্বামীভক্ত অধিকহারে সন্তান জš§দানে সক্ষম মেয়েদেরকে বিয়ে কর। কারণ তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর আমি গৌরব করব।’-(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২০৫০)।
বিয়ের ফজিলত: রাসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা বিয়ে করো। কেননা বিয়ে এক হাজার বৎসরের নফল ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।’-(তাবরানী ৬/৫)। এ মর্মে আরেকটি হাদিস, ‘হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূতঃপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন বিয়ে করে স্বাধীন নারীকে।’-(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৫)।
বিয়ে না করার পরিণতি: নবী (সা.) বলেন, ‘বিয়ের সামর্থ থাকা সত্তে¡ও যে ব্যক্তি বিয়ে করলো না সে আমার অনুসারী নয়।’-(দারেমী, হাদিস: ২০৮৭)। নবী আকরাম (সা.) এ ব্যাপারে আরও বলেন, ‘দ্বীনদারি ও চারিত্রিক দিক বিবেচনায় তোমাদের পছন্দ হয়, এমন ব্যক্তি তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দিলে (উপযুক্ত পাত্রীকে) তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি বিয়ে না দাও, তাহলে সমাজে বিরাট ফেতনা ও ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে।’-(সুনানে তিরমিজি ১/২০৭)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, তিন শ্রেণির লোককে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন: ১. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ গোলাম, যে নিজে মুক্তিপণ পরিশোধের ইচ্ছে রাখে। ২. চারিত্রিক পবিত্রতার উদ্দেশে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি। ৩. আল্লাহর পথে জিহাদকারী।’-(সুনানে তিরমিজি ২/২৯৪-২৯৫)।
বিয়ের মাধ্যমে সচ্ছলতা আসে: তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (তারা পুরুষ হোক বা নারী) তাদের বিয়ে সম্পাদন করো এবং তোমাদের গোলাম ও বাদীদের মধ্যে যারা বিয়ের উপযুক্ত, তাদেরও। যদি নিঃস্ব হয়, তাহলে আল্লাহ (বিয়ের বরকতে) নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছলতা দান করবেন। আল্লাহ বড় প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’-(সূরা নূর: ৩২)। এ আয়াত দ্বারা পরিষ্কার বুঝা গেল, আগে বিয়ে তারপর সচ্ছলতা। কিন্তু এই সহজ বিষয়টি আমরা বুঝতে চেষ্টা করি না। আমরা বরং মনে করি একটা পরিমাণ অর্থ-কড়ি না থাকলে বিয়ে অসম্ভব। কোরান তাদের এ ধারণাকে ভুল ঘোষণা করেছে।
বিয়েকে সহজ করতে হবে: হাদিসে পাকে এসেছে: হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বল্প খরচের বিয়ে সর্বাপেক্ষা বরকতময়।-(বায়হাকি ফি শুআবিল ঈমান, হাদিস: ৬৫৬৬)। হাদিসে দেখা যাচ্ছে বিয়েতে কম খরচ করাকে রাসুল (সা.) বরকতময় বলেছেন। অথচ বর্তমানে মানুষ বিয়েকে কত কঠিন করে ফেলেছে। এই কঠিন করে ফেলার কারণেই সমাজে ব্যভিচারের রাস্তা খুলে গেছে।
লেখক-মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।