সূরা ইখলাস দশবার পড়ার ফজিলত


আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন আপনারা ।


মানুষ জাগতিক বিপদ আপদ তথা প্রয়োজনে আল্লাহর নিকট দোয়া করে থাকে। কারো দোয়া সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়ে যায় আবার কারো দোয়ার পরিণাম পরকালে প্রদান করা হবে। কিন্তু দোয়া করার আগে দোয়া কবুলের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করবেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন → আমি কাউকে তার সাধ্যের বেশি দায়িত্ব দেইনা এবং আমার নিকট আছে এক গ্রন্হ যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। (সূরা ২৩/আল মুমিনুন আয়াত ৬২)

আপনি ফরজ এবং সুন্নাত আদায়ের পর যতটুকু নফল ইবাদত কোরআন তেলওয়াত জিকির দোয়া ইত্যাদি করবেন সেটাই আল্লাহ কবুল করে নিবেন ইনশাআল্লাহ। আপনি সূরা ইখলাস একবার পাঠ করলে পবিত্র কোরআন পড়ার এক তৃতীয়াংশ সাওয়াব লাভ করতে পারেন।


হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন → এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বারবার সূরা ইখলাস পাঠ করতে শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কাছে বিবৃত করা হলো। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন → যার হাতে আমার জীবন তার শপথ গ্রহণ করে বলছি সূরা ইখলাস হলো কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।

অন্য বর্ণনায় এসেছে একবার রাসূল (সাঃ) বললেন → তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে কোরআনের এক তৃতীয়াংশ শুনাব। অতঃপর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল তারা একত্রিত হয়ে গেল তিনি আগমন করলেন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করে শুনালেন। তিনি আরোও বললেন এই সূরা ইখলাস কোরআনের এক তৃতীয়াংশ সমান। ( সহীহ বুখারী ৫০১৫, মুসলিম ৮১২,তিরমিজি ২৯০০,নাসায়ী ৯৯৫,আবু দাউদ ১৪৬১, আহমদ ১০৬৬৯)

অর্থাৎ এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পরলাম যে এই সূরাটি ( সূরা ইখলাস) একবার পাপ করলে  পবিত্র কোরআনের তিন ভাগের এক ভাগ পড়ার সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ।

হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ননা করেন যে আয়িশা (রাঃ) বলেন → নবী করীম (সাঃ) ক্ষুদ্র একটি সৈন্যদলকে কোন এক অভিযানে প্রেরণ করেন। ফিরে আসার পর তারা সেনাপতির বিরুদ্ধে এই নালিশ দায়ের করলো যে তিনি নামাজের কিরাআতের শেষে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। (অথবা দুই রাকাতের এক রাকাআতে তিনি সূরা ইখলাস পাঠ করতেনই।)

একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন → তাকে জিজ্ঞেস করো তিনি কেন এমন করতেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো এবং তিনি বললেন কারণ এই সূরাটি আল্লাহর গুন ও পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে তাই এই সূরাটি পড়তে আমার কাছে খুব ভালো লাগে।

তাঁর এই কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন → তাকে বলো যে আল্লাহ তায়ালাও তাকে ভালোবাসেন। ( সূত্র তাফসীরে ইবনে কাসীর)। অন্য বর্ণনায় তিনি লোকটিকে বললেন → এর ভালোবাসা তোমাকে জান্নাত দাখিল করাবে। সুবহানাল্লাহ। (মুসনাদে আহমদ ৩/১৪১,১৫০)

রাসূল (সাঃ) বলেছেন → যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বনানো হবে। ( সহীহ আল জামি,আস সগীর ৬৪৭২) অর্থাৎ আপনি যদি দৈনিক ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করেন তাহলে জান্নাতে আপনার জন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে সুবহানাল্লাহ।

এছাড়াও আরেকটি হাদিসে এসেছে → হযরত আয়েশা (রাঃ) আনহা বলেন → রাসূল (সাঃ) যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তার দু’হাতের তালু একত্রিত করতেন। তারপর সেখানে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস এ তিনটি সূরা পড়ে ফুঁ দিতেন তারপর এ দু’হাতের তালু দিয়ে তার শরীরের যতটুকু সম্ভব মাসেহ করতেন। তার মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে শরীরের সামনের অংশ তা করতেন। এমনটি রাসূল (সাঃ) তিনবার করতেন। (বুখারী ৫০১৭, আবু দাউদ ৫০৫৬, তিরমিজি ৩৪০২)

এর ফলে ঘুমের মধ্যে শয়তান আপনাকে বিরক্ত বা জালাতন করতে পারবে না তবে এর সাথে সাথে আপনি যদি একবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমান তাহলে আরো কার্যকর ফলাফল পাবেন। যেমন -  মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে ভয়ানক স্বপ্ন দেখা, অশ্লীল স্বপ্ন দেখা বা স্বপ্নদোষ হওয়া, ঘুমের মধ্যে বোবায় বা জ্বীনে ধরা ইত্যাদি শয়তানের ওসওয়াসা থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

এছাড়াও হাদিসে আরো এসেছে রাসূল (সাঃ) বলেন → যে ব্যক্তি সকাল বিকাল সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে তা তাকে সকল প্রকার বালা ও মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট। ( আবু দাউদ ৫০৮২, তিরমিজি ৩৫,৭৫, নাসায়ী ৭৮৫২)

তাই আমরা দিনের যেকোনো সময় ফরজ নামাজ শেষ করে অন্তত একবার বা তিনবার কিংবা দশবার সূরা ইখলাস পাঠ করান চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেশি বেশি সূরা ইখলাস পড়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form